ফাউমি মুরগি লালন পালন করে লাভজনক ব্যবসা করতে চান, তাহলে সে ক্ষেত্রে ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা জানা খুবই জরুরী। কারণ মুরগিকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ভ্যাকসিন প্রদান করতে হয়। পাশাপাশি মুরগির ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে। কারণ মুরগি অসুস্থ হয়ে পড়লে ওজন সহজে বৃদ্ধি পায় না। এজন্য ভ্যাকসিন দিতে হয়। এছাড়াও ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি pdf সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা ও ওষুধের তালিকা সম্পর্কে জানতে হলে আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ুন। প্রতিটি পয়েন্টে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হবে। যারা মূলত ফাউমি মুরগি পালন করবেন তাদের জন্য সেই তথ্যগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভূমিকা
ফাউমি মুরগি তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, উৎপাদন ক্ষমতা ও দীর্ঘায়ুর জন্য খামারিদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। তবে যেকোনো পোল্ট্রির মতো ফাউমি মুরগিকেও বিভিন্ন ভাইরাসজনিত ও ব্যাকটেরিয়াল রোগের ঝুঁকির মুখে পড়তে হয়। তাই এই মুরগির সুস্থতা নিশ্চিত করতে এবং খামারের উৎপাদনশীলতা ধরে রাখতে সঠিক সময়ে ভ্যাকসিন দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
একটি সুসংগঠিত ভ্যাকসিন তালিকা মেনে চললে ফাউমি মুরগিকে সাধারণ ও প্রাণঘাতী রোগ থেকে রক্ষা করা সম্ভব। বিশেষ করে নিউক্যাসল, গামবোরো, ব্রোনকাইটিস এবং রানি খেতের মতো সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিকল্প নেই।
এই নিবন্ধে আমরা ফাউমি মুরগির জন্য আদর্শ ভ্যাকসিন তালিকা ও সময়সূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা মুরগির স্বাস্থ্য রক্ষা ও খামারের লাভজনকতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা
আপনারা যদি ফাওমি মুরগি খামার গড়ে তুলতে চান তাহলে অবশ্যই মুরগিকে সুস্থ রাখতে এবং সঠিক পদ্ধতিতে দ্রুত বড় করার জন্য অবশ্যই ভ্যাকসিন দিতে হবে এবং নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। বর্তমানে এই মুরগি পালন করে অনেক ব্যবসায়ীরা সফল হয়েছে। তবে এই সফলতার মাঝে মূল কারণ হলো তারা এই মুরগি সম্পর্কে সকল কিছু বিস্তারিত জেনে ব্যবসা শুরু করেছে।
তাই আপনাদেরও এই মুরগী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে এই মুরগিকে কি কি ওষুধ দিতে হবে এবং ভ্যাকসিন দিতে হবে সেগুলো জেনে নিতে হবে এবং ব্যবসা করতে হবে। চলুন আর কথা না বাড়ি এবার জেনে আসি ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা গুলোঃ
আইবি+ এনডি ভ্যাকসিনঃ এটি দিতে হবে ফাউমি মুরগির বয়স যখন ১-৩ দিন হবে। মুরগির রাণীক্ষেত+ ব্রংকাইটিস এই রোগের জন্য উক্ত ভ্যাকসিনটি মুরগির চোখে ফোটা দিতে হবে।
আই বি ডি ভ্যাকসিনঃ মুরগির বয়স ৭-৯ দিন হলে এই ভ্যাকসিন দিতে হয়। এটি সাধারণত মুরগির গামবোরো রোগের জন্য মুখে ফোটা প্রয়োগ করতে হয়। অর্থাৎ ড্রপার দিয়ে মুখে একফোঁটা করে দিবেন। এছাড়াও মুরগির বয়স আবার ১৮-২০ দিন হলে তখন এই ভ্যাকসিনটি পুনরায় দিতে হয়। এবার সেটি খাবার পানিতে মিশিয়ে মুরগিকে খাওয়াতে হয়।
ল্যাসোটা ভ্যাকসিনঃ মুরগির ১৬-১৭ দিন হলে তখন এই ভ্যাকসিনটি প্রদান করতে হয়। সাধারণত এটি মুরগির রাণীক্ষেত রোগ হলে প্রয়োগ করা হয়। এটি আপনারা মুরগির চোখে ড্রপ হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ মুরগির চোখে ড্রপার দিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
ফাউল পক্স ভ্যাকসিনঃ মুরগির বয়স ৩০-৩৫ দিন হয়ে গেলে তখন ফাউল পক্স রোগের জন্য এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হয়। এই ভ্যাকসিনটি আপনারা মুরগির ডানায় সুচ ফোটানো অবস্থায় অর্থাৎ ইনজেকশন দিতে হবে।
এনডি ভ্যাকসিনঃ এটি ফাওমি মুরগির রাণীক্ষেত রোগের জন্য প্রয়োগ করতে হয়। আর মুরগির বয়স যখন ৬-৭ সপ্তাহ হয়ে থাকে তখন এটি দিতে হয়। এটি মুরগির ঘাড়ের নিচে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হয়।
ফাউল কলেরা ভ্যাকসিনঃ মুরগির সাধারণত আট সপ্তাহ এর বেশি হয়ে গেলে তখন এই ভ্যাকসিন প্রদান করতে হয়। এটি সাধারণত মুরগির ফাউল কলেরা রোগের জন্য প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। আর এটি প্রয়োগ করতে চাইলে অবশ্যই কৃষি অধিদপ্তরের বা কৃষি পরামর্শ সাহায্য নিতে হবে। নিজে নিজে প্রয়োগ করা ঠিক হবে না। তাছাড়াও মুরগির বয়স যখন ১২ সপ্তাহ হয়ে যায় তখন এই ভ্যাকসিন আবার পুনরায় প্রয়োগ করতে হয়।
করাইজা + সালমোনেলা ভ্যাকসিনঃ ফাওমি মুরগির ইনফেকশন জাতীয় কোন রোগ হলে এই ভ্যাকসিন প্রদান করতে হয়। এটি মুরগির বয়স যখন ৯ সপ্তাহ এর বেশি হয় তখন দিতে হয়। আর এটি সম্পূর্ণ কৃষি পরামর্শকে নির্দেশনা অনুযায়ী প্রদান করতে হয়।
এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনঃ সাধারণত মুরগিকে এই ভ্যাকসিন ১৫-১৬ সপ্তাহ বয়স হলে দেওয়া হয়। মুরগি যখন ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ বা বার্ড ফ্লু হয় তখন এই ভ্যাকসিনটি দিতে হয়। আর এই ভ্যাকসিন মুরগিকে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রদান করতে হয়। দেওয়ার আগে অবশ্যই কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ নিবেন।
জি + এনডি +আইবি ভ্যাকসিনঃ এই ভ্যাকসিন সাধারণত মুরগির বয়স যখন ১৬ সপ্তাহ এর বেশি হয়ে থাকে তখন প্রয়োগ করতে হয়। মুরগির ব্রংকাইটিস , রানীক্ষেত সহ বিভিন্ন রোগে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হয়। আর প্রয়োগ করার নিয়ম অবশ্যই কৃষি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ফ্লোরা এর কাজ কি দেখুন
আরো পড়ুনঃ গরুর দুধ বৃদ্ধির ওষুধ এর তালিকা
তাহলে আশা করছি আপনারা এতক্ষণে ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে গেলেন। এবার সেই নিয়ম অনুযায়ী আপনারা ভ্যাকসিনগুলো প্রদান করুন তাহলে মুরগির সব সুস্থ সবল থাকবে।
প্রয়োগ করার আগে অবশ্যই কৃষি অধিদপ্তর বা পশু পাখি বিশেষজ্ঞ এর নিকট পরামর্শ করে এবং নিয়ম জেনে প্রয়োগ করতে হবে। কখনোই নিজে নিজে প্রয়োগ করতে যাবেন না যদি না জেনে থাকেন। তাই অবশ্য একজন দক্ষ ভেটেনারি চিকিৎসকের নিকট পরামর্শ করে মুরগিকে ভ্যাকসিন প্রদান করবেন।
ফাউমি মুরগির ভিটামিনের তালিকা
মুরগিকে সঠিক পুষ্টি দিতে নিয়মিত কিছু ভিটামিন দিতে পারেন। এই ভিটামিন দেওয়ার ফলে মুরগির পুষ্টি সম্মত ডিম দিতে সক্ষম হবে। তাই সঠিক নিয়মে ভিটামিন প্রদান করুন এবং ভ্যাকসিন প্রদান করতে থাকুন। চলুন আমরা এবার জেনে নেই ফাউমি মুরগির ভিটামিনের তালিকা গুলোঃ
লিভার টনিকঃ এই ভিটামিন টি ফাওমি মুরগিকে সপ্তাহে একদিন সকালের পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। তবে তিন লিটার পানিতে এক মিলি মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
এডি৩ইঃ এই ভিটামিনটি আপনারা মুরগিকে খাওয়াতে পারেন। এটি সপ্তাহে দুই দিন সকালের খাবার পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। আর এটি সম্ভাব্য ২ লিটার পানিতে এক মিলি ব্যবহার করতে হবে।
ই-সেলঃ উক্ত ভিটামিনটি এক সপ্তাহ পর পর দুইদিন করে সকালের পানিতে খাওয়াতে হবে। এটিও আপনারা দুই লিটার পানিতে এক মিলি ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ ২ লিটার পানিতে ১ মিলি ভিটামিন মেশাতে হবে।
জিংকঃ এই ভিটামিন সপ্তাহে একদিন খাওয়াতে হবে তাও আবার সকালের খাবার পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। আর এটি এক লিটার পানিতে ১ মিলি মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
ক্যালসিয়ামঃ ক্যালসিয়ামের ভিটামিন টি সপ্তাহে একদিন বিকেলে খাবার পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এটিও আপনি ১ লিটার পানিতে ১ মিলি ব্যবহার করে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।
আপনারা ফাউমি মুরগির ভিটামিনের তালিকা গুলো জেনে গেলেন। এখন আপনার সঠিক নিয়মে উক্ত ভিটামিন গুলো মুরগিকে খাওয়াতে থাকুন তাহলে মুরগি ওজনে বৃদ্ধি পাবে এবং মুরগির সঠিক পুষ্টিকর ও বড় আকারে ডিম দেবে।
ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি pdf
ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি pdf সঠিকভাবে জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা জানতে হবে। তাহলেই আপনি ফাউমি মুরগি সঠিকভাবে লালন পালন করতে পারবেন। আর এজন্য কোন পালন পদ্ধতি দরকার হবে না।
ফাউমি মুরগিকে ওষুধ দেয়ার নিয়ম জেনে ওষুধ খাওয়াতে হবে। তাছাড়াও মুরগির দ্রুত ডিম দেওয়ার জন্য কিছু ভিটামিন দেওয়া যেতে পারে যা আমরা উপরের অংশে আলোচনা করেছি।ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি খুবই সহজ একটা ব্যাপার।
আপনার অতি সহজে খামার তৈরি করে ফাউমি মুরগি লালন পালন করতে পারবেন। এই মুরগি সাধারণত আকারে হালকা ছোট হয়ে থাকে , তবে এর চোখ গুলো অনেক কালো এবং বড় বড় হয় , তাছাড়া ওই মুরগি অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন।
সহজে রোগে আক্রান্ত হয় না। বিধায় ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি সহজ একটা। আর এই মুরগি সহজেই পোষ মানে। এই মুরগির সাধারণত ওজন দেড় কেজি থেকে ২ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
তাছাড়া ওই মুরগি ভালো পরিমাণ ডিম দিয়ে থাকে। বর্তমানে এই মুরগি ডিমের জন্য পালন করা হয়ে আসছে। আর এই মুরগির মাংস খুব সুস্বাদু।
আশা করছি আপনারা ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি বলতে ভ্যাকসিন প্রদান , সঠিক পুষ্টিকর খাবার দেওয়া এবং মুরগিকে ঔষধ দেওয়া ইত্যাদি মাধ্যমে হয়ে থাকে। যা আপনারা উপরের অংশে ভালোভাবে জেনে গেছেন। উক্ত উপায় গুলো মেনে মুরগি লালন পালন করতে হবে।
ফাউমি মুরগির ঔষধের তালিকা
মুরগিকে যদি সুস্থ সবল রাখতে চান তাহলে অবশ্যই মুরগিকে সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে ঔষধ দিতে হবে। তাহলে মুরগি সঠিকভাবে বেড়ে উঠবে এবং আপনি মুরগির ব্যবসা করে লাভবান হতে পারবেন। চলুন এবার কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক ফাউমি মুরগির ঔষধের তালিকাঃ
লাইসোভিট বা গ্লুকোজঃ মুরগি জন্মের প্রথম দিনে এই ওষুধটি দিতে হয়। আর এই ওষুধ দেওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে যেটি আপনাকে কৃষি অধিদপ্তর থেকে জেনে নিতে হবে।
এমক্সাসিলিনঃ মুরগির জন্মের পর দুই থেকে চার দিন টানা এই ওষুধ দিতে হবে। তবে সঠিক মাত্রায় দেওয়া প্রয়োজন আর এজন্য কৃষি পরামর্শকে সাথে যোগাযোগ করুন।
আইবি+এনডি লাইভঃ এই ওষুধটি মুরগিকে তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে বা দিতে হবে। দেওয়ার নিয়ম যোগাযোগ করে জেনে নিন।
গামবোরো লাইভঃ মুরগির বয়সের ১২ থেকে ১৩ দিনের মধ্যে এই ওষুধটি প্রদান করতে হবে অর্থাৎ মুরগিকে ওষুধ নিয়ে অনুযায়ী খাওয়াতে হবে।
লিভারটনিক ও ভিটামিনঃ মুরগির বয়সের ১২ থেকে ১৪ দিনের মাথায় এই ওষুধটি দিতে হয়। তাই সঠিক নিয়মে দিতে ভেটেনারি চিকিৎসকের নিকট যোগাযোগ করুন।
এনডি লাইভঃ মুরগি জন্মের পর ২৪ থেকে ২৬ দিনের মাথায় এই ওষুধটি দিতে হয়। তবে সঠিক মাত্রায় দিতে হবে তাহলে মুরগি সুস্থ থাকবে।
এম্প্রোলিয়াম + সিপ্রোঃ মুরগির বয়স যখন ২৬ থেকে ২৭ দিন হয় তখন এই ওষুধটি মুরগিকে দিতে হয় অর্থাৎ মুরগিকে খাওয়াতে হবে।
প্রোবায়োটিক , ভিটামিন, লিভারটনিকঃ মুরগির ৫০ দিন বয়সে এই ওষুধগুলো প্রদান করতে হবে নিয়মিত। তাহলে মুরগির সুস্থ সবল থাকবে।
তাহলে আশা করছি আপনারা এতক্ষণে ফাউমি মুরগির ঔষধের তালিকা এগুলো জানতে পারলেন। এগুলো সঠিক মাত্রার ব্যবহার করতে কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে পরামর্শ নিবেন বা পশু ডাক্তারের কাছ থেকে ধারণা নিয়ে প্রয়োগ করবেন।
ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়
ফাউমি মুরগি সাধারণত ৫ থেকে ৬ মাস বয়সী হলে ডিম দেওয়া শুরু করে দেয়।আর এটি বছরের প্রায় ১৮০ থেকে ২৫০ টা পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। আর এরা টানা প্রায় আড়াই বছর পর্যন্ত ডিম দেয় এরপর থেকে এরা ডিম দেওয়ার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে থাকে। তবে অনেক সময় ফাউমি মুরগিকে সঠিক পুষ্টিকর খাবার দিলে ৪ মাস বয়স থেকেই ডিম দেওয়া শুরু করে।
ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)
১. ফাউমি মুরগির জন্য ভ্যাকসিন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ফাউমি মুরগি বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে, যা তাদের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয় এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। ভ্যাকসিন মুরগির শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে, ফলে মারাত্মক সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
২. ফাউমি মুরগির জন্য কী কী ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়োজন?
ফাউমি মুরগির জন্য নিউক্যাসল, গামবোরো, ব্রোনকাইটিস, রানীক্ষেত, ফাউল পক্স, মারেক্স ডিজিজ, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ও কলেরা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন দেওয়া জরুরি।
৩. ভ্যাকসিন দেওয়ার সঠিক সময় কখন?
ভ্যাকসিনের সময় নির্ভর করে মুরগির বয়স ও রোগের প্রকৃতির ওপর। সাধারণত, প্রথম দিনেই মারেক্স ডিজিজের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, ৫-৭ দিনের মধ্যে নিউক্যাসল ও গামবোরো, এবং পরবর্তী ধাপে অন্যান্য ভ্যাকসিন সময় অনুযায়ী দেওয়া হয়।
৪. ভ্যাকসিন দেওয়ার পদ্ধতি কী?
ভ্যাকসিন সাধারণত তিনভাবে দেওয়া হয় ড্রপ (চোখ বা নাকে), পানির সঙ্গে মিশিয়ে, বা ইনজেকশনের মাধ্যমে। প্রতিটি ভ্যাকসিনের জন্য সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
৫. ভ্যাকসিন দেওয়ার পর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে কি?
সাধারণত ভ্যাকসিনের তেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে মুরগির সাময়িকভাবে দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা বা হালকা জ্বর হতে পারে, যা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যায়।
৬. কি ধরনের ভুলের কারণে ভ্যাকসিন কার্যকর হয় না?
ভুল ডোজ, সংরক্ষণ পদ্ধতির ত্রুটি, দূষিত ইনজেকশন, বা সঠিক সময়ে ভ্যাকসিন না দিলে এটি কার্যকর নাও হতে পারে। তাই সবসময় নির্দেশিকা অনুযায়ী ভ্যাকসিন প্রদান করা উচিত।
৭. ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন কোথা থেকে সংগ্রহ করা যায়?
বিশ্বস্ত পোল্ট্রি ফার্ম, সরকারি প্রাণিসম্পদ দপ্তর, অথবা স্বীকৃত ভ্যাকসিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করা উচিত।
৮. ভ্যাকসিন না দিলে কী সমস্যা হতে পারে?
যদি মুরগিকে সময়মতো ভ্যাকসিন না দেওয়া হয়, তাহলে তারা ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে, যা পুরো খামারের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এতে উৎপাদনশীলতা কমে যায় এবং মুরগির মৃত্যুর হার বেড়ে যায়।
৯. খামারে ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কী সতর্কতা নেওয়া উচিত?
ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে ও পরে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা, এবং নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী প্রয়োগ করা জরুরি।
১০. ভ্যাকসিন দেওয়ার পর মুরগির যত্ন কেমন হওয়া উচিত?
ভ্যাকসিন দেওয়ার পরপরই মুরগিকে বিশ্রাম দেওয়া, মানসম্পন্ন খাবার ও পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা করা এবং পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি, যাতে তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
লেখকের শেষ কথা
ফাউমি মুরগির সুস্থতা ও উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে ভ্যাকসিন কার্যক্রমকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। সঠিক সময়ে ও সঠিক নিয়মে ভ্যাকসিন প্রদান করলে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ফলে খামারের ক্ষতির আশঙ্কা অনেক কমে যায়।
বিশেষ করে ভাইরাসজনিত ও সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে শুধু ভ্যাকসিন দেওয়াই যথেষ্ট নয়; এর পাশাপাশি মুরগির জন্য পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা, পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাও জরুরি। সফল খামারিরা জানেন, প্রতিরোধই হচ্ছে উত্তম চিকিৎসা। তাই যারা ফাউমি মুরগি পালন করছেন বা করার পরিকল্পনা করছেন, তাদের অবশ্যই ভ্যাকসিনের গুরুত্ব বুঝতে হবে এবং একটি কার্যকর ভ্যাকসিন তালিকা অনুসরণ করতে হবে।
সঠিক পরিকল্পনা ও যত্নের মাধ্যমে ফাউমি মুরগি পালনকে লাভজনক ও টেকসই করে তোলা সম্ভব। তাই আজ থেকেই আপনার খামারে ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালু করুন এবং সুস্থ ও উৎপাদনশীল মুরগির মাধ্যমে আপনার লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি করুন।